নাটোরে কবুতর-মাছ-ছাগলের খামারে মাসে লাভ লক্ষাধিক টাকা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে মাছ চাষ শুরু করেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ডুবারপাড়া এলাকার শিশির আহমেদ। পাশাপাশি কবুতর ও ছাগল পালনও শুরু করেন তিনি। এগুলোর খামার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি ব্যবসা শুরু করেছেন।

এতে লাভ হচ্ছে মাসে লক্ষাধিক টাকা। তৈরি হয়েছে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান। এসব কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন শিশির আহমেদের স্ত্রী শান্তা খাতুন। তিনিও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একইসঙ্গে এমবিএ পাস করেছেন।

জানা যায়, বর্তমানে শিশির আহমেদের খামারে ২১টি উন্নত জাতের ছাগল রয়েছে। ১৫০-২০০ জোড়া দেশি-বিদেশি কবুতর এবং ১৮ বিঘা আয়তনের দুটি পুকুর রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ পাঠাতে ৫টি ট্রাকও রয়েছে তারা। তার খামারে প্রতিদিন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন ১০০ শ্রমিক।

সরেজমিন এই উদ্যোক্তার বাড়ি গিয়ে দেখা মিললো ছাগল ও কবুতরের খামারের। দেখা গেলো মাছ বহনকারী ট্রাক। ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাড়ির একটি রুমে বসিয়েছেন অফিস। ক্ষণে ক্ষণে আসছেন বিভিন্ন ক্রেতা। আসছেন মাছ পরিবহন শ্রমিকরাও।

এ বিষয়ে শিশির আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‌‘২০১২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ কমপ্লিট করি। এরপর চাকরির খোঁজ না করে মাছ চাষ শুরু করি। নিজ এলাকায় ৮০-৯০ বিঘার ১০-১২টি পুকুরে চাষ শুরু করি বিভিন্ন জাতের মাছ। শুরুতে পুকুরে মাছ চাষ করে পায়কারদের কাছে বিক্রি করলেও ২০১৬ সালে পুকুরের সংখ্যা কমিয়ে দিই। এরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অন্য চাষিদের পুকুর এবং নিজ পুকুরের রুই, কাতল, মৃগেলসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের কাজ শুরু করি। আর এতেই আসে সফলতা। এখন প্রতিদিনই অর্ডার পাই মাছ সরবরাহের। মাছগুলো পাঠানো হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।’

দুই ছেলের জনক এই ব্যবসায়ী জানান, তার ব্যবসায়িক কাজে একই ডিপার্টমেন্ট থেকে একই সঙ্গে পাস করা তার সহধর্মিনী শান্তা খাতুন তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। তিনি মূলত দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ সরবরাহ করা, বিভিন্ন জায়গা থেকে উন্নত জাতের কবুতর কেনা আর বিক্রি, উন্নত জাতের ছাগল কিনে পালন এবং বিক্রির কাজ করেন। আর ব্যবসায়িক সব হিসাবসহ অন্যান্য সার্বিক কাজ তদারকি করেন তার স্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে শিশির আহমেদ জানান, তার ছাগলের খামারে ৬টি তোতা, তিনটি হরিয়ানা, দুটি বারবাড়ি এবং ৭টি ক্রসসহ মোট ২১টি সৌখিন ছাগল রয়েছে। গত দুই বছর থেকে তিনি ছাগলের খামার সংযোজন করেছেন। তিনি ভারতের রাজস্থান থেকে ছাগলগুলো সংগ্রহ করেন। ৬ মাস পরপর ছাগলগুলো তিনটি করে বাচ্চা দেয়। ওই ছাগলের খামারে তার এ পর্যন্ত ৯-১০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। যা থেকে বছরে গড়ে লাভ হচ্ছে অন্তত ৫ লাখ টাকা।

শিশির বলেন, ‘ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় চারটি কবুতর শখ করে পালন শুরু করি। সেই থেকে কবুতর পালনের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয়। বর্তমানে খামারে রয়েছে ১৫০-২০০ জোড়া উন্নত জাতের কবুতর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ফ্রান্সের এক্সেকিউশন, মন্ডিয়াল, কালো কিং শকিং, লাহোরি, সিরারি, কালো স্প্যান্ডেল হেনা, হলুদ হেনা, কবার লাক, ড্যানিশ ও কাল ভ্যানিশ, এন্ডেলিশিয়ান, বিউটি, লক্কাসহ ৪০-৫০ প্রজাতির কবুতর।’

তিনি জানান, তিনি ইউরোপের ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের কবুতর কেনেন। ওই কবুতরগুলো দেখাশোনার জন্য দুজন শ্রমিক সার্বক্ষণিক কাজ করে। কবুতরের খামারে ১০- ১৫ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছেন তিনি। প্রতিমাসে এসব উন্নত জাতের কবুতর বিক্রি করে তার ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। কবুতরের বাচ্চা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জোড়া বিক্রি হয় এবং বড় কবুতর ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোড়া বিক্রি হয়। এছাড়া অ্যান্ডুলুশিয়ান এক্সিকিউশন জাতের কবুতর ২ লাখ টাকাও জোড়া বিক্রি হয়, যার বাচ্চা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা জোড়া।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র জানান, প্রায় ১০০ জন শ্রমিকের সমন্বয়ে নিজস্ব পাঁচটি ট্রাকে করে ঢাকা, দিনাজপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ পাঠান। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে তার লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকে। প্রতিদিন তাকে ৮-১০ টন মাছ পাঠাতে হয় বিভিন্ন জেলায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, ভবিষ্যৎ ছাগলের খামার আরও সমৃদ্ধ ও বড় করা, কবুতরের খামারে আরও নতুন নতুন বিশ্ব চাহিদাসম্পন্ন কবুতর সংযোজন ছাড়াও মাছ ব্যবসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি মাছ বিদেশে রফতানি করতে চাই। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি মাছ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা বিদেশে, অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত মাছ ছাড়া অন্য মাছ কেউ নেয় না। আমাদের দেশের মাছের দামের তুলনায় বিদেশে একই মাছ অন্তত তিনগুণ দাম বেশি। সে ক্ষেত্রে পৃথকভাবে একটি পুকুরে অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি মাছ চাষের চিন্তা আছে। এটা করা গেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি মাছ বিদেশে রফতানি করে দেশের সুনাম বয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায় নতুন লাভের সূচনা হবে।’

শিশিরের সহধর্মিনী শান্তা খাতুন বলেন, ‘আমি ব্যবসার যাবতীয় হিসাব রাখার পাশাপাশি খামার দেখাশোনা করি। সংসারের কাজের পাশাপাশি স্বামীকে ব্যবসায় সহযোগিতা করতে পেরে খুশি।’

স্বামীর ব্যবসা দেখাশোনা ও হিসাব নিকাশ করায় একদিকে যেমন ব্যবসার আয়-ব্যয় তিনি খেয়াল রাখতে পারছেন, তেমনি ওই কাজগুলো তদারকি করায় শিশিরও নিশ্চিন্ত থেকে ব্যবসায় পূর্ণমনোযোগ দিতে পারছেন। এতে তাদের উভয়েরই অংশিদারিত্ব সৃষ্টি হওয়ায় তারা দুজনেই খুশি। দুজনের এই অংশীদায়িত্বে দিন দিন তাদের ব্যবসা উন্নত হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, ওই খামার সম্পর্কে তিনি অবগত। শিক্ষিত যুবক তার স্ত্রীর সহায়তায় উন্নত জাতের কবুতর আর ছাগলের খামার গড়ার পাশাপাশি মাছ সরবরাহের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন, একইসঙ্গে শত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিষয়টি উদাহরণযোগ্য।’

তবে এর সঙ্গে দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে মাংস উৎপাদনের জন্য দে

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *